দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ উন্নয়ন আর অগ্রযাত্রায় একধাপ এগিয়ে চলেছে। পদ্মাসেতু ও মেট্টোরেলসহ অসংখ্য দৃশমান উন্নয়নে চমক দেখিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন শেখ হাসিনা। প্রশংসিত হয়েছেন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহির্বিশ^ দরবারেও। তবে সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের দেশজুড়ে ঘটে যাওয়া তাণ্ডবলীলা-সহিংস ঘটনায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে আজকের যৌথসভায় চুলচেরা বিশ্লেষণ হতে পারে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ও সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রদের নিয়ে এই যৌথসভায় বসছে আওয়ামী লীগ। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ইতোমধ্যে গত রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানিয়েছেন দলের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে সভায় উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাসহ সারাদেশে রাজনৈতিক দুর্বলতা নিয়ে বড়-ছোট বৈঠক অব্যাহত রাখবে আওয়ামী লীগ। ঢাকা শেষ করে সারাদেশের বিভিন্ন পর্যায়েও বৈঠক শুরু করবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে এই প্রথম কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চাপ সৃষ্টি করছেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। কোনো কোনো কেন্দ্রীয় নেতার প্রতি আস্থা হারানোর মতো চিত্রও ফুটে উঠেছে কর্মী-সমর্থক একাংশের মধ্যে। যদিও অনেকে বলছেন, শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন হাইজ্যাক করে বিএনপি-জামায়াত-জঙ্গিরা অপরাজনীতি করতে না পারে সে বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সজাগ থাকতে হবে। কোটা আন্দোলনকে পুঁজি করে বিএনপি-জামায়াত-জঙ্গি অশুভ শক্তির সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, নৈরাজ্য রাজনীতির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তোলার আহবান জানান কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে ছাত্রসমাজের প্রতি আহবান জানান। এ বিষয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্যের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, দুর্বলতা চিহ্নিত করা ও প্রতিকারের উপায় বের করার জন্যই এ সভা ডাকা হয়েছে। তবে অন্য সময়ের মতোই এ সভাগুলো নিষ্ফল হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, আমরা প্রায় সবসময়ই যৌথসভা, সাংগঠনিক সভায় বসি। কিন্তু সেসব সভায় কোনো আলোচনা ছাড়াই একটি বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যেত। সামনের সভাগুলোর অবস্থাও যদি ১৫ মিনিটের আলোচনায় শেষ হয়ে যায় তাহলে কোনো লাভ হবে না। বৈঠকগুলো কার্যকর হতে হবে। তবে বৈঠক করে খুব উন্নতি করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে উপকমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, এগুলো মূলত দুর্বলতা ঢাকার এক ধরনের কৌশল। তার দাবি, গত ১৫ বছরে দলের মধ্যে একটি শ্রেণি গড়ে উঠেছে। তারা ছোট্ট ছয়টি শব্দ দিয়ে রাজনীতি করছে ‘কত নেবা, কত দিবা ও কত খাবা? এ ছয়টি শব্দের রাজনীতির চর্চা যারা করে তাদের দল থেকে বের করতে না পারলে কোনো সুফল আসবে না। তিনি বলেন, এ ছয়টি শব্দের রাজনীতি করা সবাই প্রভাবশালী মন্ত্রী ও নেতাদের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেছে। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা থাকবেন না বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী-সমর্থকরা থাকবেন? এ সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে। একই মতপোষন করেছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ। তারা মনে করেন, লেনদেন পুঁজি করে যারা রাজনীতি করছেন তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে সাংগঠনিক অবস্থা কখনোই ভালো হবে না। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হলে নির্মোহ হতে হবে, নির্মোহভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না-হলে ঐতিহ্যের আওয়ামী লীগ ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবে না। তারা বলছেন, দলকে শক্তিশালী করার বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে এখন লক্ষ্য একটাই, তা হলো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া। দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও দলের দুর্বলতা ওয়াকিবহাল হলেও তার ধ্যানজ্ঞান এখন দেশের পরিস্থিতি সত্যিকার অর্থেই স্বাভাবিক করে তোলা। এমন মতের সমর্থক সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, কোটা আন্দোলনে দলের যে ভূমিকা তাতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পূরণ করতে হলে কর্মীদের মধ্য থেকে পরিবর্তনের যে আওয়াজ উঠছে সেটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কর্মীদের আর্তনাদ শুনতে হবে। তা না হলে নেতারা বিপদে পড়বে, দলকেও উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। সময় এসেছে কর্মীদের পরামর্শ গ্রহণ করার। একইসুরে কথা বলেছেন দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত ১৫ বছর নেতাদের সিদ্ধান্তমতো কর্মীরা পরিচালিত হয়েছে। এখন এমন সময় সামনে এসেছে কর্মীদের পরামর্শ গ্রহণ না করলে অপূরণীয় ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, যেখানেই যাচ্ছি কর্মী-সমর্থকদের দাবি শুনতে পাচ্ছি সংগঠন সাজাতে হবে। সংগঠন শক্তিশালী না করলে কোনো কিছুই ঠিক থাকবে না। তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, কর্মী-সমর্থকরা বেশ সোচ্চার সংগঠন শক্তিশালী করার ব্যাপারে। অনেকেই ফোন করে, মেসেজ দিয়ে সরাসরি দেখা হলে অনেকটা আকুতির ভঙ্গিতেই দল শক্তিশালী করার দাবি তুলছেন। কর্মীরাই আওয়ামী লীগের প্রাণ, ফলে নিশ্চয়ই কিছু একটা হবে। একইকথা বলেছেন দলের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগকে অনেক কাজ করতে হবে। এখন তারই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

আজ যৌথসভায় আলোচনা হতে পারে কোটা সংস্কার আন্দোলন মোকাবিলায় ব্যর্থতার চুলচেরা বিশ্লেষণ
বিরোধীদের প্রতিরোধে যে বার্তা দিচ্ছে আ’লীগ
- আপলোড সময় : ২৯-০৭-২০২৪ ১১:০৫:৫৯ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩০-০৭-২০২৪ ১২:৫৩:৩৭ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ